কোমরে ব্যথার করণীয়

কোমরে ব্যথা: কারণ, প্রতিকার এবং চিকিৎসার পরামর্শ

অপারেশন বিহীন কোমর ব্যথার আধুনিক চিকিৎসা এখন দেশেই

ব্যথা! খুব কমন এবং পরিচিত একটি শব্দ সব বয়সী মানুষের মধ্যে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং ভোগান্তিকর শব্দ হলো কোমর ব্যথা। দেশের প্রায় ৯০% মানুষ জীবনের কোন না কোন অংশে কোমর ব্যথায় ভুগে থাকেন এবং দিন যত যায় ভোগান্তি এবং কষ্টের মাত্রা তত বাড়তে থাকে। রোগিদের ভোগান্তির মূল কারণ সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হওয়া, সঠিক এবং স্পেসিফিক রোগ নির্ণয় না হওয়া, সর্বোপরি রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা না পাওয়া। 

 

কেন কোমর ব্যথা হয়? 

কোমর ব্যথার ৯০ শতাংশ রোগী আমাদের চিকিৎসক দের কাছে আসেন, বিভিন্ন ম্যাকানিক্যাল সমস্যা নিয়ে যেমন : মেরুদণ্ডের মাংসপেশীতে আঘাত, ডিস্ক প্রোলাপ্স এবং মেরুদণ্ডের নির্দিষ্ট গঠন এর পরিবর্তন। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে বয়সজনিত মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় বা বুদ্ধি, অস্টিওপোরোসিস, এনকাইলজিং, স্পনডাইলোসিস, স্পনডাইলোলিসথেসিস, মেরুদণ্ডের স্নায়ুবিক সমস্যা, টিউমার, ক্যান্সার, বোন টিবি, পেটের বিভিন্ন অঙ্গের রোগ বা ইনফেকশন, বিভিন্ন স্ত্রীরোগজনিত সমস্যা, মেরুদণ্ডের রক্তবাহী নালির সমস্যা, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, মেদ বা ভুঁড়ি, অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি কারণেও কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও গড় আয়ু বৃদ্ধি, কর্পোরেট পেশা, নগরায়ণ, শরীর চর্চার অভাব, অত্যধিক পরিশ্রম, শ্রমিক-পেশাজীবী, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার, শারীরিক দুর্ঘটনা, দীর্ঘক্ষণ একই পজিশনে বসে থাকা, কাজ করার সময় সঠিক দেহবস্থান মেনে না করা ইত্যাদি কারণে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে।

 

কিভাবে জানবেন কোমর ব্যথার কারণ কি?

যে কোন ব্যথার চিকিৎসার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন রোগীর কেন ব্যথা হচ্ছে অথবা কি কারণে ব্যথা হচ্ছে। আমরা এখনও অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এক্স-রে অথবা এম আর আই দেখেই রোগীর চিকিৎসা প্ল্যান করি যা রোগীর সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার অন্তরায়। আমাদের প্রথমেই প্রয়োজন রোগীর স্পেসিফিক ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয়, তার জন্য প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ এর মাধ্যমে ফিজিক্যাল এসেসমেন্ট করা এবং তার স্পেসিফিক কোন মাসল, নার্ভ, লিগামেন্ট অথবা অন্য কোন স্ট্রাকচারে সমস্যা আছে কি না সেটা নির্ণয় করা। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী রেডিওলজিক্যাল এবং প্যাথলজিক্যাল ফাইন্ডিংস এর মাধ্যমে সঠিক স্বিদ্ধান্তে পৌঁছানো। কারণ স্পেসিফিক ডায়াগনোসিস ব্যতীত সঠিক চিকিৎসা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বর্তমানে মাস্কুলোস্কেলেটাল আল্ট্রাসনোগ্রাফি গুরত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে স্পেসিফিক রোগ নির্ণয় এর জন্য যার কোন ক্ষতিকর প্রভাব নেই এবং স্বল্প খরচেই তা সম্ভব। 

 

কোমর ব্যথার আধুনিক চিকিৎসা এখন দেশেই : 

কোমর ব্যথা নিয়ে আর হতাশা বা ভোগান্তি নয়! দেশেই রয়েছে এর সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুযায়ী কোমর ব্যথার ৯০% রোগী শুধুমাত্র সঠিক ফিজিওথেরাপি এর মাধ্যমেই শতভাগ সুস্থ হয়ে যায়, এক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন নেই। শুধু ১০% রোগী যাদের রেড ফ্লাগ উপস্থিত আছে তাদের শুধ অপারেশন প্রয়োজন। তবে প্রতিটি রোগীরই উচিত অপারেশনের পূর্বে একজন কোয়ালিফায়েড ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি নেয়া। আধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাঃ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে একজন রোগীর শুধু ব্যথা কমবেই না বরং সে তার স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরে যেতে পারবে। ফিজিওথেরাপির নাম শুনলেই আমরা মনে করি বিভিন্ন হিট মেশিন, বাস্তবে তা নয় । আপনার কোমর ব্যথার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক (অবশ্যই বিপিটি ডিগ্রী সম্পন্ন হতে হবে)-এর তত্ত্বাবধানে ম্যানুয়াল থেরাপি যেমন বিভিন্ন মোবিলাইজেশন, ম্যানিপুলেশন টেকনিক, মায়োফেসিয়াল রিলিজ, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ, স্ট্রেথেনিং এক্সারসাইজ, ড্রাই নিডেলিং গ্রহণ করলে আপনার ব্যথা কমার সঙ্গে সঙ্গে আপনি পুনরায় স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরে যেতে পারবেন। এ ছাড়াও ইলেকট্রোথেরাপি যেমন লেজার, আল্ট্রাসাউন্ড, ম্যাকানিক্যাল ট্রাকশনের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে ব্যথা কমে যাওয়ার পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর অধীনে মিনিমাম ২ সপ্তাহ এর পূর্ণ রিহ্যাবিলিটেশন প্রয়োজন। কোমর ব্যথার রোগীর সঠিক ফিজিওথেরাপি এবং রিহ্যাবিলিটেশন ব্যতীত কখনই পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়। 

 

Share This :

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 5 =

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Message Us on WhatsApp