ক্যান্সার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি।
কেস স্টাডিঃ
একজন রোগী জরায়ু ক্যান্সার থেকে সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন । সে অপারেশন করেছেন, কেমোথেরাপি নিয়েছেন , রেডিওথেরাপি নিয়েছেন কিন্তু চিকিৎসার সময় কোন থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ করেন নাই বা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেন নাই, পরবর্তীতে দেখা গেলো তার এবডোমিনাল মাসল, ব্যাক মাসল কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে, ফলশ্রুতীতে রোগীর প্রস্রাব, পায়খানা করতে সমস্যা হচ্ছে তার প্রস্রাব ঠিক রাখার জন্য কিডনীতে স্ট্যান্ট বসানো হয়েছে, এখন পার্মানেন্ট স্ট্যান্ট এর জন্য তার মাংসপেশির স্বাভাবিক মুভমেন্ট প্রয়োজন। এছারাও রোগীর এক পায়ের শক্তি প্রায় সম্পুর্ন হারিয়ে ফেলেছেন। এছারাও তার নানাবিধ সমস্যা তৈরী হয়েছে । সে পরবর্তীতে ভারতে চিকিৎসার জন্য গেলে তারা ফিজিওথেরাপি বিভাগে রেফার করেন সেখান থেকে রোগী আমাদের শরণাপন্ন হয়।
১০ সেশন পর রোগীর কার্যক্ষমতা অনেকটাই ফিরে এসেছে আমরা আশাবাদী রোগী তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সক্ষম হবে।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ন শাখা। শুধু মাস্কুলোস্কেলেটাল বা প্রতিবন্ধকতার চিকিৎসায় এর ব্যাপ্তি সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমান সময়ে ক্যান্সার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করছে। ক্যান্সার রোগে ফিজিওথেরাপি বিভিন্ন স্টেজে এবং বিভিন্ন সময় ভিন্নতর ভুমিকা পালন করে।
১। ক্যান্সার চিকিৎসার সময় ফিজিওথেরাপি
২। ক্যান্সার চিকিৎসার পর বা সুস্থ্য হয়ে উঠার পর ফিজিওথেরাপি
৩। প্যালিয়েটিভ ফিজিওথেরাপি
ক্যান্সার চিকিৎসার সময়ঃ ক্যান্সার চিকিৎসার সময় রোগীর বিভিন্ন ধরনের ব্যথা শুরু হয়, মাংসপেশির শক্তি কমে যায়, নার্ভের শক্তি কমে যায়, জয়েন্টের মুভমেন্ট কম হওয়ার কারনে জয়েন্টে জড়তা তৈরি হয়, জয়েন্ট নাড়াচাড়া করতে সমস্যা হয়। এছারাও কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি সহ বিভিন্ন ধরনের মেডিসিনের প্বার্শপ্রতিক্রিয়া হিসেবে রোগীর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা রক্ষা করতে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখেন।
ক্যান্সার চিকিৎসার পর বা সুস্থ্য হয়ে উঠার পর ফিজিওথেরাপিঃ বিভিন্ন ধরনের সার্জিকাল এবং নন সার্জিকাল চিকিৎসা, রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপির পর একজন রোগী ক্যান্সার থেকে মুক্তি লাভ করেন। কিন্তু দেখা যায় তার স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হচ্ছে। সে সময় তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে এবং মাংসপেশিকে কার্যক্ষম রাখতে ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন।
প্যালিয়েটিভ ফিজিওথেরাপিঃ একজন রোগির যখন আমরা মোটামুটি তার রোগের ভাগ্য নির্ধারন করে ফেলি, যে এই রোগ তাকে তার মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন আর সেরক্ম কিছু করার নেই। রোগী হয়তো তার শেষ স্টেজে এসে ক্যান্সার রোগ কে নির্নয় করতে সক্ষম হয়েছেন ততোদিনে ক্যান্সার তাকে গ্রাস করে ফেলেছেন। ঠিক সে সময়ে তার শেষ জীবন কে সুন্দর, স্বাভাবিক, ব্যথা ও প্রতিবন্ধকতা মুক্ত করতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ভুমিকা রাখতে পারে।
কি ধরনের চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারেঃ ফিজিওথেরাপি একটি প্বার্শপ্রতিক্রিয়া মুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা কিন্তু প্রতিটি মেডিসিনের ন্যায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ও নির্দিষ্ট ডোজ আছে, আছে বিধি নিষেধ। তাই একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের জয়েন্ট মোবিলাজেশন, স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ, স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজ, এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ডিভাইস ব্যবহার করবে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কোন ফিক্সড চিকিৎসা পদ্ধতি নয় যে সবার জন্য এক ধরনের চিকিৎসা ব্যবহার করা যাবে, এবং প্রতিদিন একই চিকিৎসা চলবে। রোগির সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা প্লান করা হবে এবং প্রতিদিন রোগির কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে চিকিৎসা প্লান পরিবর্তন হবে।