ফ্রোজেন শোল্ডার: লক্ষণ, চিকিৎসা এবং প্রতিকার

ফ্রোজেন শোল্ডার: লক্ষণ, চিকিৎসা এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানা আবশ্যক।

ফ্রোজেন শোল্ডার (জমাট কাঁধ/কাঁধের জড়তা) হচ্ছে কাঁধের জয়েন্টের একটি প্রদাহ জনিত সমস্য, যেখানে কাঁধের জয়েন্ট টি শক্ত হয়ে যায়। এটা প্রায়শ কাঁধের জয়েন্টের  বারংবার ব্যবহারের কারনে হয়ে থাকে বা জয়েন্টে রক্ত প্রবাহ কমে গিয়ে হয়ে থাকে।কাঁধের মাংশপেশি সমূহ সময়ের সাথে সাথে ক্রমন্বয়ে দূর্বল হতে থাকে।

ফ্রোজেন শোল্ডার কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়  ‘অ্যাডহিসিভ ক্যাপসুলাইটিস’ নামে পরিচিত।

ফ্রোজেন শোল্ডার কি কারনে হয়ে থাকে:

  •  ফ্রোজেন শোল্ডার/কাঁধের জড়তার জন্য বিভিন্ন কারন রয়েছে। তবে সবচেয়ে প্রচলিত কারন হচ্ছে কাঁধে জয়েন্টের ব্যবহার না করা।
  •   ফ্রোজেন শোল্ডার/জমান কাঁধের অন্য প্রধান কারন হচ্ছে বাহু অস্থি (হিউমেরাসের) মাথায় কোন ভাঙ্গা। এটি অষ্টিওপোরোসিস (হারক্ষয়) এ আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে বা কোন আঘাতের পরে যে স্থানে হাড়ের প্রাস্তীয় অংশ ভেঙ্গে যায়। সে ক্ষেত্রেও হতে পারে। 
  •   ডায়েবেটিস আর একটি খুবই অন্যতম কারন জমাট কাঁধের জন্য।  এ সমস্ত কারন গুলো কাঁধের চলন গতি কমায় এবং সময়ের সাথে ক্রমান্বয়ে ফ্রোজেন শোল্ডার তৈরী করে।
  •   হার্টের সার্জারী/ বাই পাস সার্জারীর কারনেও হতে পারে।
  •   শোল্ডার এর মাংশ পেশী অথবা সফট টিস্যুর ইনজুরির কারনে হতে পারে।

রোগ নির্নয়

আপনার ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধের জড়তা আছে কিনা তা কি ভাবে বুঝবেন?

  •   শোল্ডারেরে জয়েন্টে ব্যথা
  •   কাঁধের মুভমেন্ট বা নাড়াচড়া করতে সমস্যা হওয়া
  •   দৈনন্দিন বা প্রাত্যাহিক জীবনের কাজ করতে সমস্যা
  •   এটি সাধারন কাজ সমূহ যেমন-চুল আচরানো, ব্রাশ করা, জামার বোতাম  লাগানো পিছনের পকেটে হাত দেওয়া। দরজার হাতল খোলা, ভেজা কাপড়  মোচড়ানো ইত্যাদিতে ব্যথা হবে ও হাত আটকে যাবে। ব্যথা এত তীব্র হতে পারে যে রোগী রাতে  ঘুমাতে পারে না বা মধ্যে রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় । 
  •   একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হয়ে বিভিন্ন ফিজিক্যাল এসেসমেন্ট ও স্পেশাল টেস্ট এর মাধ্যমে কনফার্ম ডায়াগনোসিস করা সম্ভব। এছাড়াও প্রয়োজন সাপেক্ষে বিভিন্ন ধরনের রেডিওলোজিক্যাল এসেসমেন্ট বিশেষ ভাবে এম আর আই বা মাস্কুলোস্কেলেটাল আল্ট্রাসনোগ্রাফি এর মাধ্যমে কনফার্ম ডায়াগনোসিস করা সম্ভব।

 

চিকিৎসা:

ফ্রোজেন শোল্ডারের চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যা রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়:

ফিজিওথেরাপি: এটি ফ্রোজেন শোল্ডারের প্রধান চিকিৎসা। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে কাঁধের পেশী ও জয়েন্টকে নমনীয় করা হয়। নিয়মিত এক্সারসাইজ ও স্ট্রেচিং প্রোগ্রাম ফলো করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও পুর্ন রুমে কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন।

মেডিকেশন: ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ বা ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs) নেওয়া যেতে পারে।

ইনজেকশন: কিছু ক্ষেত্রে, কর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

সার্জারি: যদি অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে সুফল না পাওয়া যায়, তবে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিকার:

ফ্রোজেন শোল্ডার প্রতিরোধে কিছু উপায় রয়েছে:

নিয়মিত এক্সারসাইজ: কাঁধের পেশী ও জয়েন্ট নমনীয় রাখার জন্য নিয়মিত এক্সারসাইজ করা গুরুত্বপূর্ণ।

সঠিক অঙ্গবিন্যাস: কাজের সময় সঠিক অঙ্গবিন্যাস মেনে চলা এবং ভারী কাজ করার সময় সতর্ক থাকা।

কাঁধে আঘাত এড়ানো: কাঁধে আঘাত লাগার মতো পরিস্থিতি এড়ানো।

কাঁধের নড়াচড়া সীমাবদ্ধ না রাখা: দীর্ঘ সময় ধরে কাঁধ একই অবস্থায় না রাখা।

ফ্রোজেন শোল্ডার একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হতে পারে, তবে সঠিক চিকিৎসা ও প্রতিকারের মাধ্যমে এটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যদি আপনার কাঁধে ব্যথা বা নড়াচড়ার সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত তম সময়ে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করুন।

ফিজিওজোন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে, আমরা আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করি। শরীরের প্রতি যত্ন নিন এবং সুস্থ থাকুন। আপনার এ ধরনের সমস্যা সহ যেকোন ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় নিশ্চিন্তে আস্থা রাখুন ফিজিওজোনে

Share This :

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − four =

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Message Us on WhatsApp