অনেকেরই শেষ রাতে বা সকালবেলা বিছানা ছাড়তে গিয়ে হঠাৎ পায়ের পেশীতে এমন টান অনুভব করেন। মুহুর্তেই তীব্র কষ্টঅনুভূত হয়। বেশ কিছুক্ষন পর্যন্ত নড়াচড়া পর্যন্ত করতে পারেন না। পায়ে ম্যাসাজ করেও কাজ হয় না । লেগ ক্র্যাপস কারো কয়েক সেকেন্ড আবার কারো কয়েক ঘণ্টাও থাকতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘নকটার্নাল লেগ ক্র্যাম্পস’।
সাধারণত পায়ের গোছা, হাঁটুর নিচের পেশী বা উরুর পেশীতে এমন টান লাগে। অনেকের কয়েক দিন পর্যন্ত যন্ত্রণা থাকে। এ কারণেই ভয় পেয়ে যান। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ ও চিকিৎসা জানলে নিজেই ব্যবস্থা নিতে পারবেন। নকটার্নাল লেগ ক্র্যাম্পস ছেলে-মেয়ে উভয়েরই টান হতে পারে। সব বয়সীদেরই এটা হয়। তবে পঞ্চাশোর্ধদের এইসমস্যা বেশি হতে দেখা যায়। অনেকে আবার এই নকটার্নাল লেগ ক্র্যাম্পের সঙ্গে ‘রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম বা জখঝ’ গুলিয়ে ফেলেন। দুটোই রাতে ঘুমের মধ্যে হতে পারে। তবে সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। জখঝ বলতে আমরা সাধারণ পায়ে ঝি ঝি ধরা বলি।
কারণ:
অনেকগুলো কারনে এমনটা হতে পারে। অনেকক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকার পর উঠতে গিয়ে। পায়ের পেশীতে বেশি সময় ধরে অতিরিক্ত চাপ পড়লে কংক্রিটের ঠাণ্ডা মেঝেতে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে । স্বাভাবিকভাবে আমরা যেভাবে বসি সেভাবে না বসে অন্যভাবে বসার সমস্যার কারণেও এমনটা হতে পারে। এছাড়া গর্ভাবস্থায়, অতিরিক্ত মাদকাসক্তি, ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা), পারকিনশনস ডিজিজ, নিউরোমাসকুলার ডিজঅর্ডার, সমতল পায়ের পাতা বা এমন শারীরিক গঠনগত ত্রুটি, ডায়াবেটিস, ডাইইউরেটিক্স (মূত্রবর্ধক ওষুধ, যেমন ল্যাসিক সেবন), স্টয়াটিন, বিটা অ্যাগোনিস্ট কারনেও লেগ ক্র্যাম্পস হয়।
চিকিৎসা:
কী কারণ লেগ ক্র্যাম্পস’ হচ্ছে জানা থাকলে চিকিৎসা করা সহজ হবে। যেমন ডিহাইড্রেশনের কারণে হলে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে যাদের খুব বেশি ঘাম হয় তাদের একটু বেশিই পানি পান করতে হবে। এছাড়াচেস্টনাট খেতে পারেন, এতে পায়ে রক্তসঞ্চালন বাড়বে। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেনখিঁচ ধরার স্থানে গরম কাপড় দিয়ে সেঁক দিলেও আরাম পাবেন।এই সমস্যায় আকুপাংচার চিকিৎসা করালেও উপকার পাওয়া যায়ম্যাগনেসিয়াম আর পটাশিয়ামের ঘাটতি আছে কি না পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এই দুই খনিজের ঘাটতি হলে ক্র্যাম্প ধরে। তাই যেসব খাবারে ম্যাগনেসিয়াম আর পটাশিয়াম আছে সেসব খাবার নিয়মিত খেতে পারেন।ঘুমাতে যাবার আগে স্ট্রেচিং করে নিন। অর্থাৎ হাত-পা ছুঁড়ে শরীর টানটান করে তারপর ঘুমাতে যান।হাইহিল জুতো পরে দীর্ঘ সময় থাকবেন না। বিশেষ করে যাদের পায়ের তলা সমতল।
যা করবেন:
লেগ ক্র্যাম্প হলে আস্তে আস্তে উঠে বসুন। পারলে, অল্প অল্প হাটার চেষ্টা করুন। হালকা করে পা ঝাঁকিয়েও দেখতে পারেন, এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। টাইট ফিটিং কিছু পরে থাকলে খুলে ঢোলা সুতির কাপড় পরুন। প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে ভালো থাকুন।