স্ট্রোক পারকিনসন্স লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

মস্তিষ্কের অগণিত স্নায়ু-কোষের সমন্বয়ে তৈরি হয় ডোপামিন, যা আমাদের শরীরের গতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যখন এই কোষ গুলো সময়ের সাথে সাথে কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং মৃত্যুবরণ করে, তখনই ডোপামিনের ঘাটতি দেখা দেয়। আর এই ঘাটতিই আমাদের পরিচিত করে তোলে পারকিনসন্স রোগের সাথে।

বর্তমানে স্টক পারকিনসন্স রোগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদের সবার স্টক পারকিনসন্স রোগের লক্ষন ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখা দরকার। আর এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলোই শেয়ার করা হবে আজকের আর্টিকেলে।

পারকিনসন্স রোগ কী?

শরীরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা এক অদৃশ্য শত্রু – যাকে এক কথায় বলা হয় পারকিনসন্স রোগ। যা শুধু শারীরিক অসুস্থতা নয়, বরং মস্তিষ্কের কোষ গুলোর ক্রমাগত ক্ষতি করে থাকে। আর এটাই হলো পারকিনসন্স রোগের আসল রূপ।

যার মূলে রয়েছে ডোপামিন নামক রাসায়নিক উপাদানের ঘাটতি, যা মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষ থেকে তৈরি হয়। আর ডোপামিন আমাদের শরীরের গতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে যখন স্নায়ু কোষ মারা যায়, তখন ডোপামিনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং পারকিনসন্স রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়।

পারকিনসন্স রোগ কাদের বেশি হয়?

হ্যাঁ! এটা সত্য যে পারকিনসন্স রোগ মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ বেশি দেখা যায়। তবে এর কারণ এখনও সম্পূর্ণ ভাবে জানা যায়নি। কিন্তুু ধারনা করা হয় জিনগত এবং পরিবেশগত কারণ গুলোর জন্য এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। 

এছাড়াও ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়। কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কের কোষ গুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, যার ফলে ডোপামিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ জিনের পরিবর্তনের কারণে পারকিনসন্স রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। এই জিনগত পরিবর্তনের কারণে কম বয়সে (১৫-২০) বছরের মানুষেরও এই রোগ হতে পারে। তবে এ গুলো ছাড়াও পারিবারিক ইতিহাস, মাথায় আঘাত ও পেশাগত ঝুঁকির কারণেও পারকিনসন্স রোগ হতে পারে। 

পারকিনসন্স রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি কী কী?

যখন কোনো একজন ব্যক্তি পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হয় তখন তার মধ্যে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। আর অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলো,

  1. হাত, পা, মুখ, বা জিহ্বায় কাঁপুনি, বিশেষ করে বিশ্রামের সময়।
  2. পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া, শরীরের নড়াচড়ায় অসুবিধা।
  3. কাজকর্মে ধীরতা, হাঁটার সময় পদক্ষেপ ছোট হওয়া এবং ভারসাম্য হারানো।
  4. ঘুমের সমস্যা, হতাশা, কোষ্ঠকাঠিন্য, কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, ইত্যাদি।
  5. গন্ধ শুঁকে বুঝতে অসুবিধা।
  6. অনিদ্রা, দিনের বেলা অতিরিক্ত ক্লান্তি, ঘুমের সময় অনিয়মিত নড়াচড়া।
  7. কণ্ঠস্বর নরম হয়ে যাওয়া, কথা অস্পষ্ট হওয়া।

তবে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা এই রোগের গতিধারা কে মোট পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন। যে গুলোর মাধ্যমে পারকিনসন্স হয়েছে কিনা তা যাচাই করা সম্ভব। আর সেগুলো হলো,

  • নাম্বার-১ঃ প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর শরীরের একপাশে হালকা অবশ অনুভূতি ছাড়া তেমন লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
  • নাম্বার-২ঃ মুখের অভিব্যক্তি পরিবর্তিত হয়, হাসি-কান্নার মতো অভিব্যক্তি কমে যায়। শরীরের একপাশে হাত-পায়ে কাঁপুনি দেখা দেয়।
  • নাম্বার-৩ঃ উপসর্গ গুলো দ্রুত দৃশ্যমান হয়। রোগীর ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, বারবার পড়ে যান। তবে এই পর্যায়ে রোগী সাহায্য ছাড়াই নিজের কাজকর্ম করতে পারেন।
  • নাম্বার-৪ঃ রোগী সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারেন না। পেশী শক্ত হয়ে যায় এবং নড়াচড়া করতে সমস্যা হয়। ফলে রোগীর হাঁটা চলা করতে সাহায্যের প্রয়োজন হয়।
  • নাম্বার-৫ঃ শেষ পর্যায়ে রোগী নিজে কিছুই করতে পারেন না। তখন রোগীকে হুইল চেয়ারে রাখতে হয় অথবা রোগী শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।

তো যদি কোনো ব্যক্তির মধ্যে উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা যায় তাহলে আপনাকে অতি দ্রুত অভিজ্ঞ ডক্টরের শরনাপন্ন হতে হবে। কারণ, এগুলোই হলো পারকিনসন্স এর অন্যতম লক্ষণ।

পারকিনসন রোগের ঝুঁকির কারণ গুলি কী কী?

পারকিনসন্স রোগ – শুধু বয়স্কদের অসুখ নয়, বরং সব বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে এটি হলো এক ধরনের মারাত্মক সমস্যা। তবে কিছু বিষয় পারকিনসন্স এর ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। যেমন,

বয়সের ছোঁয়া

মধ্যবয়সে পা রাখার পর থেকেই পারকিনসন্সের আঁচড় কাটতে শুরু করে। বয়স যত বেশি, ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ততই প্রবল। 60 বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

পরিবারের বন্ধন

পরিবারে যদি কারো পারকিনসন্স থাকে, তাহলে অন্যদের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। জিনগত কারণে এই রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

পুরুষদের বিপদ

পারকিনসন্সের কবলে পুরুষরা নারীদের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হয়। তবে এমনটা হওয়ার কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি।

বিষাক্ত রাসায়নিকের বিপদ

আগাছা দমনকারী রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পারকিনসন্সের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এই রাসায়নিক গুলো মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করে, যা ডোপামিনের ঘাটতির কারণ হতে পারে।

স্টক পারকিনসন্স রোগের প্রতিকার

পারকিনসন রোগ শুধুমাত্র একটি শারীরিক অসুস্থতা নয়, বরং মানব জীবনের জন্য একটি কালো অধ্যায়। এই কালো অধ্যায় থেকে মুক্তি নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে জীবনযাত্রার পরিবর্তন। তাই এমন রোগ হলে অবশ্যই নিচের পদ্ধতি গুলো ফলো করার চেস্টা করবেন।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

  • আঁশযুক্ত খাবার (যেমন: শাকসবজি, ফল, বাদাম) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে, যা পারকিনসন রোগের হাত থেকে মুক্তি প্রদান করে।
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (যেমন: মাছ, বাদাম, বীজ) রোগের লক্ষণ গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
  • পর্যাপ্ত পানি (প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস) পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।

শারীরিক চর্চা

  • নিয়মিত হাঁটাচলা (প্রতিদিন ৩০ মিনিট) মাংসপেশির শক্তি, নমনীয়তা ও ভারসাম্য বৃদ্ধি করে।
  • সাঁতার একটি চমৎকার ব্যায়াম যা কোনও ঝুঁকি ছাড়াই পেশী গুলোকে শক্তিশালী করে।
  • বাগানচর্চা হালকা শারীরিক পরিশ্রমের একটি উপায় যা মানসিক প্রশান্তিও দেয়।
  • হালকা ব্যায়াম যোগব্যায়াম ইত্যাদি পারকিনসন রোগীর জন্য উপকারী।

ব্যায়ামের ক্ষেত্রে সতর্কতা

  • ভারসাম্য হারানোর ঝুঁকি থাকলে, ব্যায়ামের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
  • হাত-পা কাঁপার কারণে ব্যায়াম করা কঠিন হতে পারে। তাই, প্রয়োজনে অন্য কারো সাহায্য নেওয়ার চেস্টা করতে হবে।

পারিবারিক ও সামাজিক সহায়তা

  • পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা ও সাহায্য পারকিনসন রোগীদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করবে।
  • সামাজিক সহায়তা রোগীদের সাথে অন্যদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে সাহায্য করবে।

স্টক পারকিনসন্স রোগের ব্যায়াম

স্টক পারকিনসন, কাঁপুনি, শক্ততা এবং ধীর গতির লক্ষণ দ্বারা চিহ্নিত, যা রোগীর জীবনযাত্রার মানকে ব্যাহত করে। কিন্তু হতাশ হবেন না! নিয়মিত ব্যায়াম এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি কার্যকর অস্ত্র। স্টক পারকিনসনের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম তুলে ধরব যা রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করবে।

১) স্ট্রেচিং ব্যায়াম

স্ট্রেচিং আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত স্ট্রেচিং করলে পেশী নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়, রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত হয় এবং আঘাতের ঝুঁকি কমে। তবে হঠাৎ করে তীব্র স্ট্রেচিং করবেন না। ধীরে ধীরে এবং নিয়ন্ত্রিত ভাবে প্রতিটি স্ট্রেচ করুন। স্ট্রেচিং করার সময় কিছুটা টান অনুভব করা স্বাভাবিক। তবে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে অবিলম্বে এমন ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকবেন।

স্ট্রেচিং ব্যায়াম করার নিয়মাবলিঃ

  1. আপনার ঘাড় চেয়ারে বসে, ঘাড় ডান ও বাঁ দিকে ঘোরান।
  2. ঘাড় পেছনের দিকে টেনে কাঁধের সাথে লাগানোর চেষ্টা করুন।
  3. আপনার দুই হাত সামনে নিয়ে কবজির ওপরের দিকে তুলুন।
  4. আপনার পা চেয়ারে বসে, পা সোজা করে সামনে রাখুন।
  5. পায়ের আঙুল গুলো উপরের দিকে টানুন।
  6. পায়ের পাতা ভেতরের দিকে ঘোরান।

২) স্কোয়াটিং ব্যায়াম

স্কোয়াটিং একটি জনপ্রিয় ব্যায়াম যা পায়ের পেশী শক্তিশালী করে, কোমর ও হাঁটু নমনীয় রাখে এবং সামগ্রিক শারীরিক ভারসাম্য উন্নত করে।

স্কোয়াটিং ব্যায়াম করার নিয়মাবলিঃ

  1. কাঁধের চেয়ে একটু বেশি প্রস্থে পা রাখুন।
  2. পায়ের আঙ্গুল সামনের দিকে সোজা রাখুন।
  3. হাত কোমরের উপরে রাখুন, অথবা সামনের দিকে প্রসারিত করুন।
  4. পিঠ সোজা রাখুন, কোমর ভাঁজ করবেন না।
  5. চোখ সামনের দিকে তাকান।
  6. ধীরে ধীরে হাঁটু ভাঁজ করে নিতম্ব পেছনের দিকে ঠেলে দিন, যেন একটি চেয়ারে বসার ভঙ্গি হয়।
  7. হাঁটু ৯০ ডিগ্রির বেশি ভাঁজ করবেন না।
  8. আপনার ওজন পায়ের পাতার উপর ভারসাম্যপূর্ণ ভাবে বহন করুন।
  9. ধীরে ধীরে হাঁটু সোজা করে আবার দাঁড়ান।
  10. পিঠ সোজা রাখুন।

৩) ব্যালেন্সিং

ব্যালেন্সিং ব্যায়াম শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে, পতনের ঝুঁকি কমাতে এবং সামগ্রিক গতিশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি স্টক পারকিনসন রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এটি কাঁপুনি এবং শক্ততা কমাতে সাহায্য করে।

স্কোয়াটিং ব্যায়াম করার নিয়মাবলিঃ

  1. একটি সমতল এবং খোলা জায়গায় ব্যায়াম করুন।
  2. কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই এক পায়ে ৩০ সেকেন্ড দাঁড়ান।
  3. হাঁটু ভাঁজ করে 30 সেকেন্ড দাঁড়ান।
  4. পাঞ্জা এবং পায়ের আঙুলের উপর হেঁটে একটি রেখা তৈরি করুন।
  5. এক পায়ে ভার দিয়ে অন্য পা ঘোরান।
  6. হাতের উপর ভার দিয়ে 10 সেকেন্ড দাঁড়ান।
  7. ব্যথা অনুভব করলে থামুন এবং বিশ্রাম নিন।
  8. শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন।
  9. ব্যায়াম করার সময় আগে এবং পরে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

পারকিনসন্স রোগীদের জন্য উপলব্ধ চিকিৎসার বিকল্প

মনে রাখবেন, পারকিনসন্স রোগীদের জন্য উন্নত চিকিৎসার কোনো বিকল্প নেই। আর এই চিকিৎসার পাশাপাশি আপনার জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনলে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব। কারণ, নিয়মিত চিকিৎসা, ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে পারকিনসন্স রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আর পারকিনসন্স রোগ থেকে মুক্তি পেতে আপনার ঘরোয়া পদ্ধতিতে যেসব নিয়ম মানতে হবে সেগুলো হলো, 

  1. কোনো ঘরোয়া চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  2. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন B12, D, E, C, ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ইত্যাদি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ।
  3. পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহায়তা গোষ্ঠীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ।
  4. যোগব্যায়াম, ধ্যান, গান শোনা, বই পড়া, ইত্যাদি।
  5. মানসিক চাপের কারণ বের করে সমাধান করার চেষ্টা করা।
  6. প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম। ঘুমের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
  7. ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
  8. হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, যোগব্যায়াম, ইত্যাদি।

তবে এই নিয়ম গুলো মেনে চলার পাশাপাশি অবশ্যই ডক্টরের কাছ থেকে পারকিনসন্স রোগের চিকিৎসা নেওয়া উচিত। 

পারকিনসন্স রোগের চিকিৎসা

বিজ্ঞানীরা পারকিনসন্স রোগের নিরাময়ের জন্য ক্রমাগত গবেষণা করছেন। স্টেম সেল থেরাপি, জিন থেরাপি ইত্যাদির মতো উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই রোগের পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। পারকিনসন্স রোগ হলে ভালো ফিজিওথেরাপিস্ট এর মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি নিলেসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে 

আর পারকিনসনের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হল ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধি করা এবং ডোপামিন সম্পর্কিত কার্যকারিতা উন্নত করা। ডোপামিন মস্তিষ্কের একটি রাসায়নিক যা শরীরের গতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে পারকিনসন্স রোগের চিকিৎসা করা হয়। যেমন, 

ওষুধের চিকিৎসা

একজন পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত রোগীকে ওষুধের মাধ্যমে তার রোগকে একটি পর্যায়ে স্থির রাখার চেষ্টা করা হয়। সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করার মাধ্যমে রোগের অগ্রগতি ধীর করা হয়। এছাড়াও রোগীর মধ্যে যেসব পারকিনসন্স রোগের লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে মনে রাখবেন, ওষুধ সবসময় পারকিনসন্স নিরাময়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়।

ফিজিওথেরাপির ভূমিকা

ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। রোগীর মধ্যে থাকা ভারসাম্য উন্নত করা, পেশী শক্ততা কমানো, গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অতুলনীয়। এছাড়াও রোগীর দৈনন্দিন জীবনে হাঁটাচলা ও কাজকর্মে সহায়তা করতে ফিজিওথেরাপি অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

মেকানিক্যাল থেরাপি

পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত রোগীকে বিভিন্ন ধরনের মেকানিক্যাল থেরাপি প্রদান করা হয়। যেমন, 

  • আইআরআর
  • ওয়াক্স প্যাক
  • লো লেভেল স্টিমুলেশন
  • মাসেল ভাইব্রেটর

ম্যানুয়াল থেরাপি

যেসব মানুষ পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হয় তাদের বিভিন্ন ধরনের ম্যানুয়াল থেরাপি দেওয়া হয়। যেমন,

  • প্যাসিভ মুভমেন্ট অব দ্য জয়েন্ট
  • স্লো প্যাসিভ স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ
  • প্রোগ্রেসিভ স্ট্রেন্থদেনিং এক্সারসাইজ
  • প্যাসিভ জয়েন্ট মোবিলাইজেশন এক্সারসাইজ
  • ব্যালেন্স এক্সারসাইজ ইন সিটিং

আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা

কোনো রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি আমাদের জীবনযাত্রার মধ্যেও পরিবর্তন আনা জরুরী। তাই পারকিনসন্স রোগ থেকে মুক্তির জন্য আপনার কি কি নিয়ম মেনে চলা উচিত সেগুলো নিয়ে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত বলা হয়েছে। 

এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 

Share This :

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + 18 =

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Message Us on WhatsApp